Bee প্যান্ডোরার বাক্সের গল্প Star

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:২৭:৫৯ বিকাল



Roseআজ একটি গল্প বলি। প্যান্ডোরার বাক্সের গল্প। আমার নিজের লেখা নয়। প্রথমটি সংগৃহীত এবং ২য় অংশটি কাজী আনোয়ার হোসেনের 'মৃত্যুশীতল স্পর্শ' থেকে কিছু অংশ তুলে দেয়া। তবে এই দুইয়ের মিশেলে গল্পের ভিতরে আমাদের সকলের জন্য বিশেষ কিছু একটা ম্যাসেজ রয়ে গেলো।

তাহলে শুরু করলাম...

দেবতা প্রমিথিউস স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে আনলেন।

তিনি শুধু আগুন চুরি করেই ক্ষান্ত হলেন না; মানব জাতিকে আগুনের নানাবিধ ব্যবহারও শেখাতে শুরু করলেন। তাঁর অদেবতা সুলভ আচরণে দেবরাজ জিউস ক্ষুণ্ণ হলেন।কিন্তু অত্যন্ত কূটকৌশলী দেবরাজ প্রকাশ্যে প্রমিথিউসের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ালেন না।

জিউসের আদেশে স্বর্গের কারিগর হেফাতিউস মাটি দিয়ে একটি অপূর্ব সুন্দরী নারী মূর্তি তৈরি করলেন।ইনি ই প্যানডোরা; দেবতা জিউসের পালিত কন্যা আর পৃথিবীবাসীর সকল দুঃখের আদি মাতা। কন্যা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে জিউস তাঁর জন্য পাত্র খোঁজা শুরু করলেন।প্যানডোরা শুধু সুন্দরী ই ছিলেন না তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমতিও ছিলেন। তাসত্ত্বেও দেবরাজের কুখ্যাত ক্রোধের কারণে স্বর্গের দেবতাদের কেউ ই তাঁকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না। অবশেষে, মর্ত্যবাসী দেবতা এপিমিথিউস প্যানডোরাকে বিয়ে করলেন। বিয়েতে জিউস প্যানডোরা কে যৌতূক দিলেন স্বর্ণ নির্মিত একটি ছোট কিন্তু সুদৃশ্য বাক্স। প্যানডোরার মর্ত্য ভূমে যাত্রার প্রাক্কালে জিউস বাক্সটিতে একটি তালা এঁটে দিলেন। চাবি এপিমিথিউসের হাতে দিলেন সত্যি, কিন্তু একই সাথে শপথ করিয়েও নিলেন যাতে তিনি বাক্সটির ডালা কখনও না খোলেন। সুন্দরী বুদ্ধিমতী প্যানডোরা পিতা জিউসের মত অস্থির চিত্তের অধিকারী ছিলেন। মেয়েলি কৌতূহল থেকে তিনি বার বার জানার চেষ্টা করছিলেন বাক্সের ভেতর কি আছে। কিন্তু তাঁর স্বামী দেবতা এপিমিথিউস প্রতিবারই জিউসের কাছে দেয়া শপথের কথা বলে তাঁকে নিবৃত করছিলেন। এপিমিথিউস ছিলেন বিদ্রোহী দেবতা প্রমিথিউসের ভাই। স্বল্পভাষী, বিজ্ঞ এই মর্ত্য দেবতাটি বাক্সের ভেতর হয়ত শুভঙ্করের ফাঁকির আশংকা করছিলেন।এভাবেই পথ চলছিলেন এক জোড়া নববিবাহিত দম্পতি; স্বর্গ থেকে মর্ত্য অভিমুখে। মর্তের কাছাকাছি এসে খানিকটা বিশ্রাম নিতে এক সুপ্রাচীন গাছের নিচে বসলেন তাঁরা। ক্লান্তিতে এপিমিথিউস ঘুমিয়ে পড়লেন। মেয়েলি কৌতূহলের কাছে পরাস্ত প্যানডোরা স্বামীর খুঁটে লুকানো চাবিটি বের করে বাক্সের তালা খুলে ফেললেন। বাক্সের ডালাটি উন্মুক্ত করা মাত্র পিল পিল করে বেরিয়ে এল সকল ধরনের রোগ ব্যধি, ঘৃণা, খলতা।মুহূর্তেই পৃথিবী ছেয়ে গেল সমস্ত নোংরা আর অশুচিতায় । হতভম্ব প্যানডোরা বাক্সের ডালা ফেলে দিলেন,কিন্তু ততক্ষণে বড় দেরি হয়ে গেছে, মানুষের বোধ ও অভিজ্ঞতার বাইরের অমঙ্গলের কাল অন্ধকারে ঢেকে গেছে পৃথিবী। স্ত্রীর মৃদু ফোঁপানি শুনে জেগে উঠলেন এপিমিথিউস। বাক্সের উপর উপুড় হয়ে থাকা প্যানডোরাকে দেখে মুহূর্তেই বুঝে নিলেন তিনি সব। অনুতপ্ত স্ত্রীর প্রতি নির্দয় হতে পারলেন না তিনি। ক্রন্দসী প্যানডোরা কে বুকে তুলে নিয়ে সান্ত্বনা দিলেন। এক সময় শান্ত হয়ে এলো প্যানডোরা। স্বামী স্ত্রীতে মিলে নদীর জলে ভাসিয়ে দিলেন খালি বাক্সটি । কিন্তু তাঁরা জানতেন না, বাক্সটি তখন পুরোপুরি খালি ছিল না। সেখানে ছিল ‘আশা’। রোগ ব্যাধি, ক্ষোভ, ঘৃণা, অমংগল আর অশুচির সাথে আশাও ছিল সেখানে; কিন্তু ছিল বাক্সের একেবারে শেষে।প্যানডোরা ভয় পেয়ে ডালা টেনে দেয়ায় সে বন্দী হয়ে পড়ে। দেবতা জিউস মানুষ কে পরাস্ত করতে কন্যা কে দেয়া যৌতুকের বাক্সে মরণ বীজ পুতে দিয়েছিলেন, একই সাথে আশা’কেও সাথে দিয়েছেন যাতে মানুষই এই মারনাস্র জয় করতে পারে!

এবার দ্বিতীয়টা শুরু করলাম...

Good Luck " ১৯০৮ সালের ৩০শে জুন রেডিও একটিভ একটা উল্কাপিন্ড সাইবেরিয়ায় আঘাত হেনেছিল।অ্যাটমোস্ফিয়ার ভেদ করার সময় দুই টুকরা হয়ে যায় ওটা, বড় খন্ডটা আঘাত করে রাশিয়ায়। ইতিহাসে এটা তাঙ্গুসকা উল্কাপাত নামেই পরিচিত।এই বিস্ফোরন হচ্ছে গেল শতাব্দীর সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটা।কেন ওটা ঘটল, তা সঠিকভাবে কেউ জানে না।একটা গ্রহানু নাকি এসে পরেছিল পৃথিবীতে, কেউ বা বলে ওটা একটা ধুমকেতু ছিল, আবার অনেকের ধারণা, মহাশুন্যে ভাসমান একটা ব্ল্যাকহোলের সঙ্গে ঘষা খেয়েছিল আমাদের গ্রহ। অনেকে বলেন একটা ইউ এফ ও ক্রাশ করেছিল, যেটার পারমানবিক ইঞ্জিনের বিস্ফোরণে অমন কান্ড ঘটেছে। তবে কারণ যা-ই হোক, ফলাফলটা ছিল ভয়াবহ, সাইবেরিয়ার এক হাজার বর্গমাইল জঙ্গল ধংস হয়ে মিশে গিয়েছিল মাটির সঙ্গে। দু'একটা গাছ যা-ও বা দাঁড়িয়ে ছিল, সেগুলোর অবস্থা হয়েছিল অ্যাটম বোমা পড়ার পর হিরোশিমার বিল্ডিঙ্গগুলোর মত। শকওয়েভের ধাক্কা ছড়িয়ে পড়েছিল দুর-দুরান্তে, সেই ওয়াশিংটনের সিস্মোগ্রাফে পর্যন্ত ধরা পড়েছিল কম্পন।

তাঙ্গুসকায় ১৯২৭-এ প্রথম অফিসিয়াল ইনভস্টিগেশন চালানো হয়। তবে স্থানীয়ভাবে আরো আগেই লোকজন বিস্ফোরণটার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছিল। উল্কাপাতের এক বছর পর প্রথমবারের মত একটা দল ঘটনাস্থলের দিকে রওয়ানা হয়, তবে বিরুপ আবহাওয়া এবং যাত্রার ধকল সইতে না পেরে তারা অর্ধেক পথ গিয়েই উলটো ঘুরতে বাধ্য হয়। তাঙ্গুসকা হচ্ছে সাইবেরিয়ান তৈগা'র সবচেয়ে দুর্গম একটা এলাকা। এর দু'বছর পর, ১৯১১-তে একটা দল শেষ পর্যন্ত এক্সপ্লোশন সাইটে পৌছাতে সমর্থ হয়, আর তখনই কোনও মানুষ প্রথমবারের মত ধ্বংসযজ্ঞটা স্বচক্ষে দেখবার সৌভাগ্য লাভ করে।

ওখানে কী ঘটেছে, এই খবর রাজধানী সেইন্ট পিটার্সবার্গে পৌঁছুতে পৌঁছুতে ১৯১২ সাল হয়ে যায়। দেরি হবার কারন ফিরতি পথে একের পর এক অভিযাত্রীর রহস্যময় মৃত্যু। কি একটা রোগ যেন ধরেছিল তাদের, সারা শরীর থেকে মাংস খসে পড়ছিল, শেষ পর্যন্ত লাশগুলোয় কঙ্কাল ছাড়া আর কিচ্ছু অবশিষ্ট থাকছিল না।

আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল স্থানীয় গ্রাম আর শহরগুলোতে। অশিক্ষিত লোকজন বলাবলি করতে শুরু করল, অভিশাপ নেমে এসেছে তাদের উপর। খোদ শয়তান ঘুষি মেরেছে তাঙ্গুশকায়, গোটা বন মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে, আর শয়তানের বিষাক্ত স্পর্শে মৃত্যুর নির্যাস ছড়িয়ে গেছে সবখানে, সেটাই মানুষ মেরে ফেলছে।এই সময় জঙ্গলের ভিতর ছোট ছোট পাথরের আকারে উল্কাটার বিভিন্ন অংশ পাওয়া যেতে থাকল, সেগুলো ধরলে উত্তাপ অনুভব করা যায়। এসব পাথর জনপদে পৌছাতেই রহস্যময় রোগটায় গ্রামের পর গ্রাম আর শহরের পর শহর উজাড় হয়ে যেতে শুরু করল। ব্যস, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ প্রাপ্ত পাথরগুলোকে স্যাটান্স স্কিন বা শয়তানের চামড়া বলতে শুরু করল, ঘুসির সময় যেটা ঝরে পড়েছে... শুরুতে ঘুসোঘুসিটা ছিল গুজব, এবার সেটা পরিণত হল স্থির বিশ্বাসে। এই অবস্থায় উদয় হল এক ধর্মযাজক, তার নির্দেশে অভিশাপের হাত থেকে বাঁচাতে পাথরগুলো সোনাখচিত আইকনের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে শুরু করা হলো, যাতে আইকনের ভিতর থেকে শয়তানের অশুভ শক্তি বেরুতে না পারে।

প্ল্যানটা কাজে লেগেছিল, এর পরে আর ক্ষতি হল না কারও। তবে সেটা আইকনের জোরে নয়, সোনার কারণে। আণবিক ঘনত্ত বেশী হবার কারণে সোনা অনেকটা সীসার মতই রেডিয়েশন ঠেকাতে পারে।

১৯১২ সালের কথা এটা। রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী আলেকজান্দ্রা যখন খবর পেলেন যে, অদ্ভুদ এক অভিশাপে তার প্রজারা মারা যেতে শুরু করেছে, তখন তিনি ব্যাপারটা তদন্ত করার জন্য তার এক বিশ্বস্ত ধর্মযাজককে পাঠালেন ভ্যানাভারা... তাঙ্গুশকার সবচেয়ে নিকটবর্তী শহরে।এই যাজকই প্রথম সোনার আইকনে পাথগুলো ঢোকাতে শুরু করেন। বিশাল এক প্রজেক্ট নেন সেই প্রিস্ট, সমস্ত শহর আর গ্রামের পাশাপাশি জঙ্গলে গিয়েও উল্কাটার যত খন্ড পড়েছিল-সব খুঁজে নিয়ে আসেন। এই প্রিস্টের নাম গ্রেগোরী এফিমোভিচ নোভিখ। কিন্ত ইতিহাসে তিনি ‘রাসপুটিন’ নামেই অধিক পরিচিত।

উল্কাপিন্ডের সবগুলো টুকরো উদ্ধার করতে তাঙ্গুশকায় পুরো দুই বছর কাটান রাসপুটিন। সেইন্ট পিটার্সবার্গে ফেরার পর তিনি স্যাটানস ফিস্টের কথা গোপন রাখেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে তখন, রাসপুটিনের ভয় হচ্ছিল, পদার্থটার খবর ফাঁস হলে সেটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ১৯১৫’র জানুয়ারীতে জার্মানরা বোলিমভে বিষাক্ত গ্যাসের আক্রমন চালালেও তিনি প্রতিশোধ নিতে চাননি।রহস্যটা চাপা দিয়ে রেখেছেন। যুদ্ধ আরো প্রবল আকার ধারণ করতেই স্যাটানস ফিস্টের ব্যাপারে কানাঘুসা শুরু হলেও তার কাছ থেকে আইকনগুলোর খোঁজ বের করে নেবে তার স্বদেশীরা। এই অবস্থায় বিশ্বস্ত কিছু প্রিস্টকে নিয়ে গোপন একটা সংঘ গড়লেন তিনি- নাম রাখলেন ‘ব্রাদারহুড অভ স্যাটানস ফিস্ট’, যাতে তিনি মারা গেলেও আইকনগুলো দেখাশুনার কেউ থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯১৬-র ডিসেম্বরে হত্যা করা হয় রাসপুটিনকে-রাজ পরিবারের উপর অশুভ প্রভাব বিস্তারের জন্য নয়, ওটা ইতিহাসের বইয়ের লোক দেখানো কারণ; তাকে মেরে ফেলা হয়েছিল রাশিয়ান সমরনায়কদের কাছে স্যাটানস ফিস্টের সন্ধান না দেয়ার অপরাধে।

... রাসপুটিনের মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ পরেই শুরু হয় প্রথম রাশিয়ান বিপ্লব। স্যাটানস ফিস্টের গুজব যারা জানত, তারা হয় মারা পড়ে, নয়ত দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ধীরে ধীরে তাঙ্গুশকার বিস্ফরণের ব্যাপারেও মানুষের কৌতুহল কমতে থাকে। মোট পঞ্চাশটা আইকনের ভিতর লুকানো ছিল উল্কার খন্ডগুলো, সেগুলো দেশের আনাচে কানাচে বিভিন্ন চার্চের ভিতর লুকিয়ে ফেলে ব্রাদারহুডের সদস্যরা। তারা কিছুদিন পর পর ই জিনিসগুলোর লোকেশন বদলে ফেলত, যাতে কমিউনিস্টরা চেষ্টা করলেও সেগুলোর খোঁজ না পায়। এভাবে দিন গেল, মাস গেল, বছর গেল। পুরনো সদস্যরা বুড়ো হয়ে পড়ল, ব্রাদারহুডের লক্ষ্য ধরে রাখার জন্য নতুন নতুন সদস্য আনা হল। এদেরই একজন হলেন লিওনিদ কুলিক- সংঘের প্রথম সদস্য, যিনি প্রিস্ট নন। তাকে সংঘে ঢোকানোর পিছনে উদ্দেশ্য ছিল- যাতে তিনি তাঙ্গুশকায় যেসব বৈসাদৃশ্য দেখেছেন, তা কাউকে না বলেন। অবশ্য স্রেফ মুখ বন্ধ রাখার জন্য কুলিককে সদস্য করা হলেও পরবর্তীতে আদর্শটার একজন সত্যিকার অনুসারী হয়ে উঠেন তিনি, এমনকি একসময়ে সঙ্ঘের প্রধানও হন তিনি।

কুলিক দায়িত্ব নেয়ার পর ঠিক করলেন, দুনিয়া যেভাবে পাল্টাচ্ছে, তাতে সামান্য কিছু বিদেশী সদস্য নিয়োগ না দিলে ভবিষ্যতে বিপদ দেখা দেবে। তা ছাড়া সঙ্ঘে বিজ্ঞানীও প্রয়োজন, কারণ তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন যে, স্যাটানস ফিস্ট আসলে কোনো অভিশাপ নয়, ওটা একটা বৈজ্ঞানিক বিস্ময়। ততদিনে তেজস্ক্রিয়তার উপর যথেস্ট গবেষণা হয়েছে, ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে মানুষ জানতে পেরেছে। কুলিক ভেবে দেখলেন, পদার্থটা যদি একবার কোনো ফিযিসিস্টের হাতে পড়ে, তাহলে নিঃসন্দেহে ওটা পারমানবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা হবে। তাই তিনি আইকনগুলো ধ্বংস করে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। একে একে সিমেন্টের চাটাইয়ে ভরা হল উনপঞ্চাশটা আইকন, সেগুলো ফেলে দিয়ে আসা হলো সাগরে। শেষটা ছিল দুর্গম এক মঠে, সেটা তখনো আনা সম্ভব হয় নি, এমন সময় হানা দিল দুর্ভাগ্য। সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমন করে বসল জার্মানি, কুলিক তখন ব্রাদারহুডের জন্য নতুন একটা মিশন নিয়ে ব্যস্ত-হিসেব করে করে বের করে ফেলেছেন উল্কার দ্বিতীয় খণ্ডটার ট্রাজেক্টরি, কোথায় সেটা পড়েছে। তার ইচ্ছে ছিলো ওটাকেও প্রথমটার মত সোনায় মুড়ে সাগরে ফেলে দেবেন। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হল না, হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে গেলেন বেচারা। নাৎসিরা টরচার করে তার পেট থেকে সব কথা বের করে নিল। সবকিছু শুনে হিটলার পাগল হয়ে গেল স্যাটানস ফিস্ট হাতে পাবার জন্য।

স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধ করে জার্মানরা শেষ পর্যন্ত শুধু কুলিকের নোটবুকগুলোই উদ্ধার করতে পেরেছিল, কোনো আইকন পায়নি। একটা বাদে সবগুলো আগেই ফেলে দেয়া হয়েছে পানিতে, শেষটাও ওদের অজান্তে সাধারণ ট্রেজারের সঙ্গে লুঠ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় পদার্থটার উৎস রইল শুধু দ্বিতীয় পিন্ডটা, ওটার দিকেই নজর দিল তারা। কুলিকের ক্যালকুলেশন থেকে ওটা কোথায় পড়েছে, তা জেনে গেল সহজেই।

কুলিকের নোটবুক থেকে ঊল্কাপিন্ডটার লোকেশন জানতে পারে নাৎসিরা, তবে সেটা লাখ লাখ টন বরফের তলায় চাপা পড়ে গেছে। তখন চালু করা হল প্যান্ডোরা প্রজেক্ট, পিন্ডটা উদ্ধার করার জন্য। কন্ট্রাক্টটা দেয়া হয় স্যাকলিচ কর্পোরেশনকে, তাদেরকে সাহায্য করার জন্য সেবাস্টিয়ান গ্রাবসহ কয়েকজন এক্সপার্ট আসে, আর আসে কন্সেন্ট্রেসন ক্যাম্প থেকে এক হাজার শ্রমিক। ইম্প্যাক্ট জোনের পাঁচ মাইল দূরে একটা গুহা খুঁজে বের করে ওরা, আন্ডারওয়াটার টানেল ধরে সাবমেরিনে করে ওখানে পৌঁছায়, শুরু করে খনন কাজ। আটাশ টন সোনা আনা হয়েছিল উদ্ধারকৃত স্যাটানস ফিস্টের স্টোরেজ বক্স তৈরী করার জন্য।

এরপর পা ভেঙ্গে গ্রাব জার্মানি ফিরে আসে, প্রজেক্টটার ভাগ্যে কী ঘটেছে, জানত না সে।“

... তো এই ছিল সত্যিকারের প্যান্ডোরার বাক্সের গল্প। দেবতা জিউস মানুষকে পরাস্ত করতে তার কন্যার যৌতুকের বাক্সে মরণ বীজ পুতে দিয়েছিলেন। এটা ছিল প্রথম প্যান্ডোরার বাক্স... পুরোটাই একটা মীথ। আর মহাকাশের রেডিওঅ্যাক্টিভ এক উল্কাপিন্ডের অংশবিশেষ পৃথিবীর ক্ষমতালোভী মানুষদের হাত থেকে রক্ষার জন্যই এই দ্বিতীয় প্যান্ডরার বাক্সের উৎপত্তি। প্রথম প্যান্ডরার বাক্সের ভিতর আশা ভুলে বন্দী হয়ে ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বাক্সে আশা বন্দী ছিল না- আশার ভিতরেই এই বাক্সটি বন্দী ছিল।

আর সেটা হল-শান্তির আশা।

যুদ্ধ-বিভেদ ভুলে সকল জাতি মিলে এক জাতিতে পরিনত হবার আশা।

যে জন্য ব্রাদারহুডের আত্মত্যাগী সদস্যরা কস্ট করে গেছেন। নিজেদের জীবনকে কোরবান করে গেছেন। আশা যদি বন্দী থাকত, তবে তারা তৎকালীন সমরনায়কদের হাত থেকে সেই ভয়ংকর জিনিসকে বাচিয়ে রাখতে পারতেন না। আশা ছিল তাদের মনের ভিতরে, যে কারনেই সেই সময় তারা এতটা শক্ত হতে পেরেছিলেন।

পরবর্তীতে প্যান্ডোরা প্রজেক্ট ধ্বংস করে দিয়ে উল্কা পিন্ডটির দ্বিতীয় খন্ডের সকল অংশগুলোকে ও সাগরে ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু তারপর ও কি আনবিক বোমা বানানো থেকে কাউকে ফেরানো গেছে? এখন তো আরো অনেক অনেক ক্ষমতাশালী বোমা মজুদ রয়েছে দেশে দেশে। এখন আমাদের নেই লিওনিদ কুলিক কিংবা ব্রাদারহুডের সেই সদস্যরা। তবে তাদের মনের ভিতরের সেই শক্তি আনয়নকারী সেই ‘আশা’ রয়ে গেছে।

কিন্তু এই যুগে শুধু আশাই যথেষ্ট নয়।

এর সাথে আর কিছু একটা প্রয়োজন।

তবে সেজন্যও তো প্রয়োজন তৃতীয় প্যান্ডোরার বাক্সটির।

কারো খোজে আছে কি এই বাক্সটি?

হ্যা, এই আমাদের পবিত্র আল কোরআন ই কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য আশার বাণী নিয়ে থাকবে। সেই পর্যন্ত এটিই আমাদের জন্য 'প্যান্ডোরার বাক্স'। সকল আশার উৎস- একই সাথে একটি পুর্নাঙ্গ জীবনবিধান।।

[রেফারেন্সঃ মৃত্যুশিতল স্পর্শ- কাজী আনোয়ার হোসেন]

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৮ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

263698
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৪
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সুন্দর ঘটনাগুলো উপভোগ করলাম যদিও দুটি ঘটনা আমার জানা আছে, পড়েছিলাম। তবে শেষ দিকে আপনার মূল্যায়ন টি বেশ চমকপ্রদ হয়ছে। আমি প্রথম থেকেই ভাবছিলাম, কেন এত ঘটনা বলছেন? সুন্দরভাবে শেষ করার জন্য আবারো ধন্যবাদ। অবশ্যই শিক্ষনীয় পোষ্ট এবং ছবি খানাও। অনেক ধন্যবাদ
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫০
207259
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
আমিও আন্দাজ করেছিলাম আপনি হয়তো ঘটনা দুটি আগেই পড়ে থাকবেন। ভালো লাগল আমার ভাবনাটি সত্য হওয়ায়।
সুন্দর মন্তব্য আমার জন্য অনেক উৎসাহ যুগিয়ে গেলো।
আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা... Good Luck Happy
263716
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৮
আবু সাইফ লিখেছেন : বুড়োদের অনেকের জন্যই কাহিনীগুলো পূরণো-

কিন্তু আপনার সমাপ্তিটা অবশ্যই প্রশংসার উপযুক্ত

জাযাকাল্লাহ..
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
207266
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ।
এজন্যই লেখার শুরুতেই আমি বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
আসলে পবিত্র আল কোরআন কে নিয়ে কিছু একটা লেখার মত ধৃষ্ঠতা এবং যোগ্যতা কোনোটাই আমার নেই। কিন্তু হৃদয়ে এক সুতীব্র বাসনা কয়েকদিন ধরে জেগে চলেছিল। এজন্যই গল্প দুটির মোড়কে হলেও ম্যাসেজাকারে আল কোরআন কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি সকলের জন্য একমাত্র শান্তির এবং আদর্শ জীবনবিধান হিসেবে।
আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইলো।Happy Good Luck
263744
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩২
জুমানা লিখেছেন : সুন্দর ঘটনাগুলো ভালো লাগলো, শিক্ষনীয় পোষ্ট এবং ছবিটা ও সুন্দর , আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ Rose Rose Rose
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:১৯
207406
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও আমার ব্লগে অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা রইলো।Happy Happy Good Luck
263800
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। ছোটকালেই প্যান্ডেরার গল্প পরেছিলাম। মৃত্যশিতল স্পর্শ ও পড়েছি। কিন্তু এই উপমা দিয়ে এমন সুন্দর একটি সত্য কে প্রকাশ করা যায় ভাবি নি।
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:২০
207407
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাই।
শুভেচ্ছা রইলো।Happy Happy Happy Good Luck Good Luck
263808
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২৯
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : তথ্যবহুল, সুন্দর করে গুছিয়ে লেখিত পোস্টটি পড়ে অনেক জানতে পারলাম। তাঙ্গুশকায় উল্কাপিন্ডের গঠনা পড়েছিলাম তবে রাসপুটিন ও প্যান্ডেরার গল্প আপনার পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম । ধন্যবাদ

আপনার সাথে একমত "পবিত্র আল-কোরআন'ই কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য আশার বাণী নিয়ে থাকবে। "
আন্তরিকভাবে দোয়া করি আল্লাহ আপনার কলমের জোর বাড়িয়ে দিন,জাযাকাল্লাহ খায়ের ।


১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:২২
207408
মামুন লিখেছেন : আপনার নান্দনিক মন্তব্যে আমি অভিভূত!
সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck
263841
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৩৮
কাহাফ লিখেছেন : নিজস্ব বিশ্বাসের আংগিকে সুন্দর পরিসমাপ্তি সহ আকর্ষনীয় ভংগিমায় উপস্হাপিত গল্পের জন্যে আন্তরিক মোবারকবাদ আপনাকে মামুন ভাই...... Rose
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:২২
207409
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck Good Luck
263843
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:১৯
রাইয়ান লিখেছেন : অসাধারণ ... দম বন্ধ করেই পড়ে যাচ্ছিলাম ! প্যান্ডোরার মিথটি তো জানা ছিলোই , তাঙ্গুসকা নিয়ে আজই জানলাম। খুবই সুন্দর প্রেজেন্টেশন আপনার , ধন্যবাদ সতত !
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:২৩
207410
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
আর সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।Happy Good Luck
264089
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:১৯
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : প্যান্ডোরার মিথটা জানা ছিল,বাকিটা অজানা। জানা-অজানার সমন্বয়ে অসাধারণ প্রজেন্টেশন। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে Good Luck Good Luck
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫২
207622
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন।
অনেক শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck
268406
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৩০
আহ জীবন লিখেছেন : সুপার। ঘটনা দুটোই আমার অজানা। রানা পড়ি না অনেক বছর। এক সময় সাহিত্য বলতে কাসেম বিন আবু বকর আর রানা কেই চিনতাম। দুর্দান্ত আপনার ফিনিসিং। খুব খুব খুব ভালো লাগলো।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:০৭
212235
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File